সালমান ফজলুর রহমান একজন প্রখ্যাত শিল্পপতি এবং সমাজসেবক, যিনি সালমান এফ রহমান নামেই বেশী পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ভাইস চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব এবং সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপগুলো দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে নতুন এক রূপ দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
পিতা ফজলুর রহমান এবং মাতা সৈয়দা ফাতিনা রহমানের পুত্র সালমান এফ রহমান ১৯৫১ সালে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রী সৈয়দা রুবাবা রহমান এবং একমাত্র ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান।
সালমান এফ রহমান ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝিতে পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি ও তাঁর বড় ভাই আহমেদ সোহেল ফাসিউর রহমান মিলে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইউরোপের বাজারে সামুদ্রিক খাবার এবং হাড়চূর্ণ রপ্তানি শুরু করেন। এসব পণ্য রপ্তানীর বিনিময়ে তাঁরা ইউরোপ থেকে মানসম্পন্ন ঔষধ আমদানি করতেন।
বছরের পর বছর ধরে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে বেক্সিমকো গ্রুপ ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে অন্যতম সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে । প্রতিষ্ঠানটি টেক্সটাইল, ঔষধশিল্প, সামুদ্রিক খাবার, আবাসন, কনস্ট্রাকশন, তথ্য ও প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সিরামিকস্, আর্থিক সেবা এবং জ্বালানী সহ বিবিধ খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এর অল্টারনেটিভ ইনভেষ্টমেন্ট মার্কেট-এ তালিকাভুক্ত প্রথম বাংলাদেশী কোম্পানি । এছাড়াও বেক্সিমকো বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের সর্ববৃহৎ নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০ হাজার এর অধিক লোকের কর্মসংস্থান করেছে।
সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃঢ়ব্যক্তিত্বের অধিকারী সালমান এফ রহমান শুধুমাত্র বেক্সিমকো গ্রুপের বৃদ্ধি ও প্রসারই নিশ্চিত করেননি, একই সাথে তিনি সফল ভাবে বাংলাদেশের ব্যবসা খাতে উন্নয়ন এবং গতিশীলতা এনেছেন। স্বাধীনতার পরপর দেশের প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
সালমান এফ রহমান দেশের বেসরকারী খাতের প্রণোদনায় নিয়োজিত শীর্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্নরস এর চেয়ারম্যান।
তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট’ এর বোর্ড অব এডিটর’স এর চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি ২৪ ঘন্টা সংবাদ-ভিত্তিক চ্যনেল ‘ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন’ এর চেয়ারম্যান। দেশের শীর্ষস্থানীয় স্পোর্টিং ক্লাব ‘আবাহনী লিঃ’–এর চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
অতীতে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সার্ক অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা ‘সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ এর সভাপতি ছিলেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষসংগঠন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন।
নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে সালমান এফ রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়। সেইসময় তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন।
বর্তমানে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে সালমান এফ রহমান নিজস্ব তহবিল থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে ১২ হাজার প্যাকেট বিতরন করেন। প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল, ৫ লিটার তেল, ২ কেজি লবন, ৫ কেজি আটা ও ঔষধ ছিল। পাশাপাশি এই তহবিল থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২২টি কমিউনিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মাঝে পিপিই, জীবাণুনাশক স্প্রে, সাধারণ মানুষের জন্য জরুরী ঔষধ ও সাড়ে ১৭ হাজার মাস্ক বিতরন করা হয়।
এছাড়া তার ব্যবস্থাপনায় বেক্সিমকো গ্রুপ ১৫ কোটি টাকা সমমূল্যের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), ওষুধ ও টেস্ট কিট দিয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে এবং হাসপাতালে। পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপ আধুনিক পরীক্ষাগার তৈরির কাজে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের যেসব হাসপাতাল সেবা দিচ্ছে, সেগুলোতে অর্থসাহায্য করেছে।
সালমান এফ রহমান “প্রয়াস” এর একজন পৃষ্ঠপোষক। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ শিশুদের উন্নয়ন ও সহায়তা নিয়ে কাজ করে। শিশুদের বিশেষায়িত শিক্ষা, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল পরীক্ষণ ও চিকিৎসা, বিনোদন, সহপাঠ্যক্রম সহ সামগ্রিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও প্রয়াস -শিক্ষক, শিশুদের বাবা-মা কেও প্রশিক্ষণ ও সমন্বিত সেবা প্রদান করে থাকে l
দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতির পথে পরিচালনার জন্য একটি শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরির উপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন সালমান এফ রহমান। এলক্ষ্যে তিনি তার এলাকা দোহার ও নবাবগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অনবরত অবদান রেখে চলছেন। এর মধ্যে তাসুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়, পদ্মা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের জন্য তার সহায়তা ও আর্থিক অনুদান উল্লেখযোগ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আধুনিক কম্পিউটার শিক্ষাকে সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি দোহারের সকল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রদান করেন। এছাড়াও, তিনি সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের শিক্ষামূলক উন্নয়নের জন্য গণ সাহায্য সংস্থা (জিএসএস) এর মাধ্যমে দাতব্য কাজে অবদান রেখে চলেছেন। ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নের স্বার্থে ২০০৬ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে বার্ষিক অনুদান দিয়ে আসছেন।
সালমান এফ রহমান একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া অনুরাগী। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান, খেলোয়াড়, এবং দলের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের খেলাধুলার উন্নয়নে উল্ল্যেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বেক্সিমকো গ্রুপ ২০১১ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফিসিয়াল পৃষ্ঠপোষক ছিল। এছাড়া তিনি ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মধ্যকার আন্তর্জাতিক ফিফা প্রীতি ম্যাচের আয়োজন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেন ।
বিনামূল্যে ঔষধ ও পোশাক বিতরণ তাঁর নিয়মিত দাতব্য কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। দোহারের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি ২৪০টিরও বেশি আর্সেনিক মুক্ত টিউব ওয়েল স্থাপন করেন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেন যার মাধ্যমে ১৬ জন ডাক্তার নিয়মিতভাবে চিকিৎসা এবং ঔষধ প্রদান করছেন।